বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। নেক্সাম একটি প্রেসক্রিপশন-ভিত্তিক ঔষধ। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো অবস্থাতেই এই ঔষধ সেবন শুরু বা বন্ধ করা উচিত নয়।
নেক্সাম (Nexum): গ্যাস্ট্রিক, অ্যাসিডিটি ও আলসারের চিকিৎসায় এর ব্যবহার, ডোজ ও সকল তথ্য
গ্যাস্ট্রিক, বুক জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভোগেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। এই সাধারণ কিন্তু কষ্টকর সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ডাক্তাররা প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের ঔষধ দিয়ে থাকেন, যার মধ্যে নেক্সাম (Nexum) অত্যন্ত পরিচিত একটি নাম। চলুন, এই ঔষধটি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
নেক্সাম কি? এর গ্রুপ নাম কি?
নেক্সাম (Nexum) হলো একটি ব্র্যান্ড নাম। এর মূল বা জেনেরিক উপাদান হলো ইসোমিপ্রাজল (Esomeprazole)। এটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (Proton Pump Inhibitor - PPI) নামক ঔষধের শ্রেণিভুক্ত।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, আমাদের পাকস্থলীর ভেতরের কিছু "পাম্প" প্রতিনিয়ত অ্যাসিড তৈরি করে যা খাবার হজমে সাহায্য করে। যখন এই অ্যাসিড অতিরিক্ত পরিমাণে তৈরি হয়, তখনই বুক জ্বালাপোড়া বা অ্যাসিডিটির সমস্যা দেখা দেয়। নেক্সাম এই অ্যাসিড তৈরির পাম্পগুলোকে ব্লক করে দেয়, ফলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন কমে যায় এবং রোগী আরাম বোধ করে।
নেক্সাম ট্যাবলেট কেন ব্যবহার করা হয়?
ডাক্তাররা সাধারণত নিম্নলিখিত অবস্থাগুলোর চিকিৎসার জন্য নেক্সাম (২০ মিগ্রা বা ৪০ মিগ্রা) প্রেসক্রাইব করেন:
- গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ (GERD): এই অবস্থায় পাকস্থলীর অ্যাসিড ওপরের দিকে খাদ্যনালীতে উঠে এসে বুক জ্বালাপোড়ার সৃষ্টি করে।
- পাকস্থলীর আলসার (Stomach Ulcer): পাকস্থলীর ভেতরের ঘা বা ক্ষত শুকাতে এবং ব্যথা কমাতে এটি ব্যবহৃত হয়।
- জলিনজার-এলিসন সিনড্রোম: এটি একটি বিরল রোগ যেখানে পাকস্থলীতে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হয়।
- ডিসপেপসিয়া বা বদহজম: অ্যাসিডজনিত বদহজমের সমস্যায় এটি আরাম দেয়।
- ব্যথানাশক ঔষধ (NSAIDs) খাওয়ার ফলে সৃষ্ট আলসার প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য।
খাওয়ার সঠিক নিয়ম (Dosage)
এই ঔষধটির কার্যকারিতা অনেকাংশে নির্ভর করে এটি খাওয়ার সঠিক নিয়মের উপর।
- নেক্সাম ট্যাবলেটটি সাধারণত দিনে একবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
- এটি অবশ্যই খালি পেটে খেতে হয়। সবচেয়ে ভালো নিয়ম হলো, সকালে নাশতার ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা আগে খাওয়া।
- ট্যাবলেটটি অবশ্যই আস্ত গিলে খেতে হবে। ভাঙা, চিবানো বা গুঁড়ো করা যাবে না, কারণ এর উপরের বিশেষ আবরণটি ঔষধকে পাকস্থলীর অ্যাসিড থেকে রক্ষা করে।
- ডোজ (২০ মিগ্রা বা ৪০ মিগ্রা) এবং কতদিন খেতে হবে, তা সম্পূর্ণরূপে আপনার ডাক্তার নির্ধারণ করবেন।
সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া (Side Effects)
অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই নেক্সামের তেমন কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায় না। তবে কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে:
- মাথাব্যথা
- ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য
- পেটে ব্যথা বা গ্যাস
- বমি বমি ভাব
দীর্ঘদিন ধরে (এক বছরের বেশি) এই ঔষধ খেলে ভিটামিন বি-১২ এর ঘাটতি বা হাড় ক্ষয় হওয়ার সামান্য ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া দীর্ঘদিন এটি খাওয়া উচিত নয়।
সাধারণ প্রশ্ন (FAQ)
১. নেক্সাম ট্যাবলেটের দাম কত?
উত্তর: বাংলাদেশে নেক্সাম ২০ মিগ্রা ট্যাবলেটের দাম প্রতি পিস প্রায় ৭ টাকা এবং নেক্সাম ৪০ মিগ্রা ট্যাবলেটের দাম প্রতি পিস প্রায় ১০ টাকা (এই দাম পরিবর্তনশীল)।
২. নেক্সাম (Esomeprazole) ও ওমিপ্রাজল (Omeprazole) এর মধ্যে পার্থক্য কি?
উত্তর: দুটি ঔষধই একই (PPI) গ্রুপের। তবে ইসোমিপ্রাজলকে ওমিপ্রাজলের একটি উন্নত এবং আরও কার্যকর সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে কিছুটা বেশি শক্তিশালী।
শেষ কথা
নেক্সাম গ্যাস্ট্রিক ও অ্যাসিডিটির চিকিৎসায় একটি অত্যন্ত কার্যকর ঔষধ। কিন্তু মনে রাখবেন, এটি কোনো সাধারণ ব্যথার ঔষধ নয় যে যখন তখন খাওয়া যাবে। এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে এবং যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে সর্বদা একজন রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।