Translate

ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ, চিকিৎসা, প্লাটিলেট এবং প্রতিরোধের A to Z গাইড

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই আর্টিকেলটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্য ও সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য। ডেঙ্গু একটি মারাত্মক রোগ হতে পারে। এখানে প্রদত্ত তথ্য কোনোভাবেই চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প নয়। যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ, চিকিৎসা, প্লাটিলেট এবং প্রতিরোধের A to Z গাইড

বর্ষাকাল এলেই আমাদের দেশে যে রোগটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তার নাম ডেঙ্গু জ্বর। প্রতি বছর এই রোগে অগণিত মানুষ আক্রান্ত হয় এবং অনেকের জীবনও কেড়ে নেয়। কিন্তু ভয় না পেয়ে, সঠিক তথ্য ও সচেতনতার মাধ্যমে আমরা এই রোগকে প্রতিরোধ করতে পারি এবং আক্রান্ত হলেও সঠিকভাবে তার মোকাবেলা করতে পারি। চলুন, ডেঙ্গু সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ডেঙ্গু মশা
ডেঙ্গু মশা


ডেঙ্গু জ্বর কি এবং কিভাবে ছড়ায়?

ডেঙ্গু হলো একটি ভাইরাসজনিত জ্বর, যা এডিস (Aedes) প্রজাতির স্ত্রী মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায়, বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো ব্যক্তিকে কামড়ানোর পর যদি ওই মশা অন্য কোনো সুস্থ ব্যক্তিকে কামড়ায়, তখন সেই ব্যক্তিও ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হন।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য: এডিস মশা কোনো নোংরা পানিতে নয়, বরং ঘরের ভেতরে বা আশেপাশে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতে বংশবিস্তার করে। যেমন: ফুলের টব, ডাবের খোসা, পরিত্যক্ত টায়ার, এয়ার কন্ডিশনার বা ফ্রিজের নিচের ট্রে-তে জমে থাকা পানি।

ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো কী কী?

ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো সাধারণত মশা কামড়ানোর ৪ থেকে ১০ দিন পর প্রকাশ পায় এবং একে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।

সাধারণ ডেঙ্গুর লক্ষণ:

  • হঠাৎ করে তীব্র জ্বর (১০২-১০৫° ফারেনহাইট)।
  • প্রচণ্ড মাথাব্যথা, বিশেষ করে চোখের পেছনে।
  • পুরো শরীরে, বিশেষ করে মাংসপেশী ও হাড়ের জয়েন্টে তীব্র ব্যথা (এজন্য একে "ব্রেক-বোন ফিভার" বা হাড় ভাঙা জ্বরও বলা হয়)।
  • বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
  • শরীরে লালচে র‍্যাশ বা ফুসকুড়ি ওঠা।
  • তীব্র দুর্বলতা ও খাবারে অরুচি।

মারাত্মক ডেঙ্গুর বিপদচিহ্ন (Warning Signs):

সাধারণত জ্বর কমার পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে নিচের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে এক মুহূর্ত দেরি না করে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে:

  • পেটে তীব্র ও একটানা ব্যথা।
  • ঘন ঘন বমি হওয়া (দিনে ৩ বারের বেশি)।
  • নাক, দাঁতের মাড়ি বা ত্বকের নিচ থেকে রক্তক্ষরণ।
  • শ্বাসকষ্ট বা দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস।
  • শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া এবং নিস্তেজ হয়ে পড়া।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা ও প্লাটিলেট প্রসঙ্গ

ডেঙ্গুর কোনো নির্দিষ্ট অ্যান্টি-ভাইরাল ঔষধ নেই। এর চিকিৎসা মূলত লক্ষণভিত্তিক এবং সহায়ক (Supportive Care)।

  • বিশ্রাম: রোগীকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে রাখতে হবে।
  • প্রচুর তরল গ্রহণ: শরীরকে পানিশূন্যতা থেকে বাঁচাতে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, যেমন—বিশুদ্ধ পানি, খাবার স্যালাইন (ORS), ডাবের পানি, ফলের রস ও স্যুপ খাওয়াতে হবে।
  • জ্বরের জন্য: জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খেতে হবে।
  • ব্যথানাশক ঔষধ নিষেধ: অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন (Aspirin, Ibuprofen) বা অন্য কোনো ব্যথানাশক ঔষধ খাওয়া যাবে না, কারণ এগুলো রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

প্লাটিলেট (Platelet): ডেঙ্গু হলে রক্তে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যেতে পারে। তবে প্লাটিলেট কমাটাই একমাত্র বিপদের চিহ্ন নয়। ডাক্তাররা রক্তচাপ, রক্তবমি এবং অন্যান্য বিপদচিহ্ন দেখেই চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন। তাই প্লাটিলেট নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন।

ডেঙ্গু রোগীর খাবার তালিকা

কী খাবেন?

  • সহজপাচ্য খাবার যেমন: জাউভাত, নরম খিচুড়ি, স্যুপ।
  • প্রচুর তরল: ডাবের পানি, লেবুর শরবত, খাবার স্যালাইন, ফলের রস।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল: পেঁপে, কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, আনারস।
  • প্রোটিন: সিদ্ধ ডিম, মাছের হালকা ঝোল।

কী খাবেন না?

  • তেল, চর্বি ও মশলাযুক্ত খাবার।
  • বাইরের খাবার ও ফাস্ট ফুড।
  • লাল বা কালো রঙের খাবার, যা মলের সাথে রক্ত যাচ্ছে কিনা তা বুঝতে অসুবিধা তৈরি করতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয়:

  1. মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করুন: 집 বা আশেপাশে কোথাও পানি জমতে দেবেন না। ফুলের টব, টায়ার, প্লাস্টিকের পাত্র নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
  2. দিনের বেলায় সতর্ক থাকুন: দিনের বেলায় ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করুন।
  3. শরীর ঢেকে রাখুন: শিশুদের ও নিজেদের ফুল হাতা পোশাক পরান।
  4. মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করুন: ত্বকে ব্যবহার করা যায় এমন মশা তাড়ানোর লোশন বা স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন।

শেষ কথা: ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্ক নয়, প্রয়োজন সচেতনতা। নিজের ঘর ও আশপাশ পরিষ্কার রাখার মাধ্যমে আমরা কেবল নিজেকেই নয়, পুরো সমাজকে সুরক্ষিত রাখতে পারি। জ্বর হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

0 comments:

Post a Comment